Type to search

বাংলাদেশ সারাদেশ

বন্যা পরিস্থিতির অবনতি

বন্যা পরিস্থিতির অবনতি

ডেস্ক : যমুনা, ধরলা, ব্রহ্মপুত্র, তিস্তা ও দুধকুমার নদ-নদীতে পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় উত্তরাঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। উত্তরের জেলাগুলোর হাজার হাজার হেক্টর ফসলি জমি তলিয়ে গেছে বন্যার পানিতে। বিপুলসংখ্যক মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। তবে ফরিদপুর জেলায় বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হতে শুরু করেছে। প্রতিনিধি ও সংবাদদাতারা জানান :

কুড়িগ্রাম : নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। স্থানীয় পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্যমতে শনিবার বিকাল ৩টায় ধরলার পানি সেতু পয়েন্টে বিপদসীমার ৩৪ সেন্টিমিটার ও ব্রহ্মপুত্রের পানি চিলমারী পয়েন্টে বিপদসীমার ২০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। অন্যদিকে পানি বৃদ্ধি পেয়ে ব্রহ্মপুত্রের পানি নুনখাওয়া পয়েন্টে বিপদসীমার ৩৮ সেন্টিমিটার ও তিস্তার পানি কাউনিয়া পয়েন্টে বিপদসীমার ৫ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এতে করে ধরলা ও ব্রহ্মপুত্রের অববাহিকার চরাঞ্চলের নিচু এলাকা প্লাবিত হয়ে পড়েছে। ঘর-বাড়িতে পানি ঢুকে পড়ায় পানিবন্দি হয়ে পড়েছে অন্তত ৩০ হাজার মানুষ। এসব এলাকার কাঁচা সড়ক তলিয়ে থাকায় ভেঙে পড়েছে যোগাযোগ ব্যবস্থা।

পানি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ধরলা, ব্রহ্মপুত্র, তিস্তা ও দুধকুমারসহ অন্যান্য নদ-নদীর ভাঙন তীব্র হয়ে উঠেছে। কুড়িগ্রাম কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্র জানিয়েছে, চলতি বন্যায় জেলায় ১০ হাজার হেক্টর জমির রোপা আমন ও ৮৫ হেক্টর জমির সবজি ক্ষেত পানিতে নিমজ্জিত হয়ে পড়েছে।

সদর উপজেলার পাঁচগাছী ইউনিয়নের ধরলা পাড়ের কৃষক আব্দুস ছালাম জানান, বন্যার পানিতে তরিতরকারির ক্ষেতসহ তলিয়ে গেছে রোপা আমন ক্ষেতও।

সিরাজগঞ্জ : ভারী বৃষ্টি আর উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে যমুনা নদীর পানি বাড়ছেই। গত ২৪ ঘণ্টায় সিরাজগঞ্জ শহররক্ষা বাঁধ পয়েন্টে ৮ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে বিপদসীমার ২৬ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এতে নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হওয়ায় বিপাকে পড়েছেন নদীপারের হাজার হাজার মানুষ। বন্যাকবলিত এলাকার বিস্তীর্ণ ফসলি জমি তলিয়ে যাওয়ায় নষ্ট হচ্ছে রোপা আমন ক্ষেত, বীজতলা, আখ, পাট, তিল ও সবজি বাগানসহ বিভিন্ন ফসল। সে সঙ্গে বিপাকে রয়েছেন গো-খামারিরা। রাস্তাঘাট ও বসতবাড়িতে পানি থাকায় নিরাপদ বাঁধে আশ্রয় নিচ্ছেন বন্যার্তরা।

যমুনা ও অভ্যন্তরীণ চলনবিল, ইছামতী, করতোয়া, ফুলজোড় ও বড়াল নদীতে পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় জেলার নিম্নাঞ্চল ও চরাঞ্চলের নদী তীরবর্তী এলাকাগুলো প্লাবিত হচ্ছে। ইতোমধ্যেই জেলার কাজীপুর উপজেলার চরাঞ্চলের নাটুয়ারপাড়া, নিশ্চিন্তপুর, চরগিরিশ, তেকানি, মুনসুরনগর ও খাসরাজবাড়ি ইউনিয়ন এবং চৌহালী ও সদর উপজেলার বিভিন্ন স্থানে শুরু হওয়া ভাঙনে নদীতে বিলীন হয়েছে বিস্তীর্ণ ফসলি জমি ও বসতভিটা।

জেলার ৭টি উপজেলার প্রায় ২০ হাজার মানুষ বন্যাকবলিত হয়ে পড়েছে। বন্যা প্লাবিত এলাকায় বসতবাড়ি, রাস্তাঘাট ও ফসলি জমিতে পানি উঠে পড়ায় বিপাকে পড়েছে সাধারণ মানুষ। সে সঙ্গে দেখা দিয়েছে বিশুদ্ধ খাবার পানির সঙ্কট। অন্যদিকে পানি বাড়ায় তলিয়ে গেছে শাহজাদপুর উপজেলার বিস্তীর্ণ গোচারণভূমি ও সবুজ ঘাস। এতে দুই লক্ষাধিক গবাদিপশু নিয়ে বিপাকে পড়েছেন গো-খামারিরা।

চৌহালী উপজেলার বাঘুটিয়া ইউনিয়নের বেনুনাই গ্রামে কয়েকদিন ধরে শুরু হয়েছে তীব্র নদীভাঙন। এসব এলাকার ১৩টি গ্রামের অসংখ্য বসতবাড়ি ধীরে ধীরে নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাচ্ছে। সিরাজগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, গত ২৪ ঘণ্টায় যমুনা নদীর পানি ৮ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে শনিবার দুপুরে সিরাজগঞ্জ শহর রক্ষা বাঁধ হার্ডপয়েন্ট এলাকায় বিপদসীমার ২৬ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। একই সময়ে কাজিপুর মেঘাই ঘাট পয়েন্টেও বেড়েছে নদীর পানি।

টাঙ্গাইল : যমুনা, ধলেশ্বরী ও ঝিনাই নদীর পানি বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। জেলায় বন্যা পরিস্থিতির ক্রমেই অবনতি হচ্ছে। বন্যার পানিতে তলিয়ে যাচ্ছে একের পর এক নিম্নাঞ্চল। পানিবন্দি হয়ে পড়েছে কয়েক হাজার মানুষ। ক্ষতি হচ্ছে ফসলের। বিভিন্ন স্থানে দেখা দিয়েছে নদীভাঙন। এ তথ্য টাঙ্গাইল পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী সিরাজুল ইসলাম নিশ্চিত করেছেন।

টাঙ্গাইল সদর উপজেলার হুগড়া ইউনিয়নের কচুয়া, চরগোপাল, মালতিপাড়া, সাতানী হুগড়া ও কাশিনগর, মাহমুদনগর ইউনিয়নের ডুবাই, বেথর, খারজানা, মাখরখৈাল ও কাকুয়া ইউনিয়নের রাঙ্গাচিরা, পৌলি, কালিকৈটিল, মইসা ও ওমরপুর প্লাবিত হয়েছে।

কাকুয়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ বলেন, আমার ইউনিয়ন যমুনা নদীর তীরবর্তী হওয়া ইউনিয়নটি প্রতিবছরই যুমনার ভাঙনের শিকার হয়। এ বছরও হাটবাজার থেকে শুরু করে শত শত ঘরবাড়ি ভেঙে গেছে। তিনি বলেন, ইউনিয়নের প্রায় সব গ্রামেই পানি প্রবেশ করেছে। শত শত পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।

টাঙ্গাইল পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী সিরাজুল ইসলাম জানান, যমুনাসহ সব নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে। অন্যদিকে জেলায় পানিবন্দি হয়ে পড়েছে টাঙ্গাইল সদর, কালিহাতী, দেলদুয়ার, নাগরপুর, ভুয়াপুর, মির্জাপুর ও বাসাইল উপজেলার কয়েক হাজার মানুষ।

ফরিদপুর : জেলায় সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির প্রতিদিনই উন্নতি হচ্ছে। শুক্রবার রাত থেকে শনিবার সকাল পর্যন্ত ফরিদপুরে পদ্মা নদীর পানি দুই সেন্টিমিটার কমেছে। যদিও গোয়ালন্দ পয়েন্টে পদ্মার পানি এখনও বিপদসীমার ৪৩ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। বন্যার পানিতে এখনও প্লাবিত রয়েছে ফরিদপুর সদর উপজেলার ডিক্রিরচর, নর্থ চ্যানেল, চরমাধবদিয়া ও আলিয়াবাদ ইউনিয়নের অর্ধশতাধিক গ্রাম। এ ছাড়া চরভদ্রাসন, সদরপুর ও ভাঙ্গা উপজেলার শতাধিক গ্রাম প্লাবিত থাকায় এসব গ্রামের ২০ হাজার মানুষ পানিবন্দি অবস্থায় রয়েছে। পানি কমলেও প্লাবিত এলাকার বিভিন্ন সড়ক পানিতে তলিয়ে থাকায় লোকজনের চলাচলে বেশ অসুবিধা হচ্ছে। গরু-ছাগল নিয়ে বন্যাকবলিত এলাকার মানুষ পড়েছে বিপাকে। গো-খাদ্যের সঙ্কটও দেখা দিয়েছে। বন্যার পানি কমতে থাকায় মানুষের মধ্যে দুর্ভোগ বেড়েছে। এসব এলাকায় খাবার পানির সঙ্কট দেখা দিয়েছে। প্লাবিত এলাকাসমূহের মধ্যে কয়েকটি গ্রামের মানুষের মধ্যে অল্পকিছু ত্রাণসামগ্রী বিতরণ করা হলেও বেশিরভাগ মানুষই ত্রাণের আওতায় আসেনি।

তবে ফরিদপুরের জেলা প্রশাসক অতুল সরকার জানিয়েছেন, বন্যাকবলিত এলাকার অসহায় মানুষের জন্য পর্যাপ্ত ত্রাণসামগ্রী রয়েছে। কেউ না খেয়ে থাকবে না। বন্যাকবলিত এলাকার জনপ্রতিনিধিদের নির্দেশনা দেওয়া আছে, যারা অসহায় দরিদ্র রয়েছে তাদের মাঝে ত্রাণ বিতরণ করার জন্য।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, জেলার বিভিন্ন নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হওয়ায় আমন ধান, বাদাম ও বিভিন্ন প্রকার সবজির ক্ষেত তলিয়ে গেছে। এসব এলাকার দেড় হাজার হেক্টর জমির ফসল নষ্ট হয়েছে।

অন্যদিকে পদ্মা, আড়িয়াল খাঁ, মধুমতী ও গড়াই নদীর ভাঙন তীব্র আকার ধারণ করেছে। পদ্মার ভাঙনের কারণে ডিক্রিরচর ও নর্থ চ্যানেল ইউনিয়নের সাতটি গ্রামের মানুষের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে। প্রতিদিনই ভাঙছে নতুন নতুন এলাকা। ভাঙনে বেশকিছু ফসলি জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। এ ছাড়া আড়িয়াল খাঁ নদীর ভাঙনে সদরপুর, মধুমতী ও গড়াই নদীর ভাঙনে আলফাডাঙ্গা ও মধুখালী উপজেলার বেশ কয়েকটি গ্রামের বসতবাড়ি, ফসলি জমি ও বেশকিছু স্থাপনা বিলীন হয়েছে।

গাইবান্ধা : বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা ঢলে গাইবান্ধার ব্রহ্মপুত্র নদের পানি বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। দ্রুত বাড়ছে তিস্তাসহ অভ্যন্তরীণ সব নদীর পানিও। এতে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়ে পানিবন্দি হয়ে পড়েছে কয়েকশ পরিবার। তলিয়ে গেছে চর-দ্বীপচর ও নিম্নাঞ্চলের রাস্তাঘাট ও ফসলি জমি।

শনিবার যমুনা নদীবেষ্টিত সাঘাটা উপজেলার হলদিয়া, পালপাড়া, চিনিরপটল, চকপাড়া, পবনতাইড়, থৈকরপাড়া, বাঁশহাটা, মুন্সিরহাট, গোবিন্দ, নলছিয়া ও ব্রহ্মপুত্র তীরবর্তী ফুলছড়ি উপজেলার ফুলছড়ি, গজারিয়া ও খাটিয়ামারী ইউনিয়নের চরাঞ্চলের বেশিরভাগ এলাকার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়ে পড়ে। এ ছাড়াও তিস্তা পাড়ে সুন্দরগঞ্জ উপজেলার চণ্ডিপুর, কাপাসিয়া, তারাপুর, বেলকা, হরিপুর ও শ্রীপুর গ্রামের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়ে পড়েছে।

টিএস

Translate »