‘ভ্যাকসিন নিন : জীবন বাঁচান’

স্বপ্না গুলশান:
অস্ট্রেলিয়ার নিউ সাউথ ওয়েলস রাজ্যে আজ নতুন করে কোভিড সনাক্ত হয়েছেন ২৯১ জন। ২০ জানুয়ারি ২০২০ সালে প্রথম কোভিড সনাক্ত হয় অস্ট্রেলিয়াতে। তখন থেকে হিসাব করলে দেড় বছরে এ রাজ্যে কোভিড পজিটিভ হয়েছিলেন ১০ হাজার ১৫৭ জন। বর্তমানে হাসপাতালে ভর্তি হতে হয়েছে ৩০৪ জনকে। ৫০ জন আছেন আইসিইউতে । গেল দেড় বছরে রাজ্যটিতে করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ৭৯ জন । অস্ট্রেলিয়াতে ছয়টি রাজ্য ও তিনটি ক্যাপিটাল টেরিটরি রয়েছে। এখানকার সবচেয়ে ধনী রাজ্য হলো নিউ সাউথ ওয়েলস। এ রাজ্যটির রাজধানী সিডনীতে বসবাস করছি আমরা । ব্যয়বহুল এ সিডনি শহরটিতে অন্যান্য স্থান থেকে অনেকে পাড়ি জমান চাকুরীর আশায় । সে কারনে এখানে করোনা আক্রান্তের হার ও বাডছে । তবে আশার কথা হলো করোনায় আক্রান্ত ও জীবন নাশের হার এশিয়া, ইউরোপ , আমেরিকা মহাদেশের তুলনায় অস্ট্রেলিয়াতে অনেক কম।
দেশটি নিজেই অভ্যন্তরীণভাবে উৎপাদন করছে Oxford AstraZeneca vaccine । এখানে মজুদ আছে বিপুল পরিমান অকাসফোর্ড এস্ট্রোজনিকা কোভিড ভ্যাকসিন ।
কিন্ত সমস্যা হলো অধিকাংশ অসিরা ফাইজার নিতে অধিকতর আগ্রহী। কারন হলো এ পযন্ত এস্ট্রেজনিকা ভ্যাকসিন নিয়ে ব্লাড ক্লটে মারা গেছে ৭ জন। যা মোট এস্ট্রোজনিকা ভ্যাকসিন গ্রহীতার তুলনায় খুবই নগন্য । গতকাল ও এস্ট্রোজনিকা ভ্যাকসিন ১ম ডোজ নিয়ে মারা গেছে ৩৪ বছরের এক মহিলা । এস্ট্রজনিকা ভ্যাকসিন জনিত এ ইস্যু নিয়ে আরো বিস্তারিত অনুসন্ধান চলছে । প্রতিবেশী দেশ ইন্দোনেশিয়া , ফিজি সহ বেশকটি দেশকে এস্্ট্রজনিকা ভ্যাকসিন অনুদান হিসেবে দিয়েছে দেশটি। করোনা নিয়ন্ত্রনে ইউরোপের বেশীরভাগ দেশ , করোনায় জর্জরিত ভারতে এস্ট্রোজনিকা ব্যাপক হারে ব্যবহার করা হচ্ছে। ভারত নিজেরা তৈরী করে এটির নাম দিয়েছে কোভিডশিল্ড । যাহোক, ডাক্তাররা বলে থাকেন সব ভ্যাকসিনে সামান্য পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে । তবে অনেকের আবার দেখা নাও দিতে পারে। আপনার ডাক্তারের সাথে শারীরীক নানা বিষয় নিয়ে খোলামেলা আলোচনা করুন। সিদ্ধান্ত নিন কোন ভ্যাকসিনটি নিতে চান আপনি । বিশ্বস স্বাাস্থ্য সংস্থার মতে , কোভিডের মারাত্মক হুমকি থেকে রক্ষা পেতে হলে অবশ্যই সবাইকে ভ্যাকসিন নিতে হবে।
গতকাল এখানকার এবিসি নিউজে পড়লাম – এক বিশেষজ্ঞ ডাক্তার উল্লেখ করেছেন যে এস্ট্রজনিকা ভ্যাকসিন জনিত ব্লাড ক্লটের সমস্যা পুরুষের চাইতে মহিলাদের মধ্যে বেশী দেখা গেছে। যাদের বেশীরভাগ হলো কম বয়সী নারী , আধা বয়সী নারী ও যুবতী নারী। বিশেষত, যেসব নারীদের বয়স ৫০ এর নীচে। একসময় এখানে অস্ট্রেলীয় সরকারের চিকিত্সা বিষয়ক কমিটিও প্রথমে সুপারিশ করেছিল যাদের বয়স ৫০ /৬০ এর নীচে তাদেরকে ফাইজার নিতে । ৬০ উর্ধ অন্যদের কে এস্ট্রোজনিকা নিতে। তবে সম্প্রতি এ সুপারিশ থেকে সরে এসেছে সরকার । বর্তমানে দেশটিতে কমবয়সী ছেলেমেয়েদেশকে এস্ট্রোজনিকা নিতে উৎসাহিত করা হচ্ছে। ১২ থেকে ১৬ বছরের শিশু কিশোরদের ফাইজারের জন্য সুপারিশ করা হয়েছে। দেশটিতে বর্তমানে শুধু বায়োটেক ফাইজার ও অক্সফোর্ড এস্ট্রোজেনিকা ভ্যাকসিন অনুমোদন দেয়া হয়েছে। এখনো পর্যন্ত মর্ডানা, সিনেফার্ম , জনসনের কোভিড ভ্যাকসিন সহ অন্যকোন ভ্যাকসিন ব্যবহারের অনুমোদন দেয়নি দেশটি।
যাহোক , সারাবিশ্বে ভ্যাকসিন সবার জন্য বিনামূল্যে দেয়া হচ্ছে। তাই দেরী না করে আজই ভ্যাকসিন নিন , বাঁচান একেকটি মুল্যবান জীবন ।
(স্বপ্না গুলশান , প্রবাসী সাংবাদিক ও এডিটর , এবিসিবি নিউজ)