কোভিড-১৯ পজিটিভ মানেই হাসপাতাল নয়
দেশে বৈশ্বিক মহামারি করোনা ভাইরাস শনাক্তে বা মৃত্যুতে প্রতিদিনই রেকর্ড ভাঙছে। প্রতিটিই হাসপাতালে রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। বেডের সংকুলান করতে হিমশিম খাচ্ছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। বিশেষ করে যে সব রোগীর অক্সিজেন লেভেল স্বাভাবিকের তুলনায় নিচে নেমে যাচ্ছে তাদেরকে আইসিইউ বেড দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না।
তবে যেসব করোনা রোগীর তেমন কোনো লক্ষণ নেই তারা চিকিৎসকদের পরামর্শ অনুযায়ী বাসায় চিকিৎসা নিচ্ছেন। আবার অনেকে অনলাইনে টেলিমিডিসিনের মাধ্যমে সেবা নিচ্ছেন। চিকিৎসকরা বলছেন- করোনা আক্রান্ত হলেই হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার প্রয়োজন নেই। তবে অক্সিজেন লেভেল ৯৩-এর নিচে নেমে গেলে অবশ্যই হাসপাতালে ভর্তি হতে হবে।
বৃহস্পতিবার (১৫ এপ্রিল) বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) গিয়ে দেখা গেছে- অনেকেই করোনার নমুনা দিয়ে ফলাফলের জন্য অপেক্ষা করছেন। সিট ফাঁকা না থাকায় অনেকেই প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে অন্য কোথাও ফিরে যাচ্ছেন।
হাসপাতালের তথ্য কেন্দ্রের কর্মকর্তা ছয়ন বিশ্বাস বলেন, এক সপ্তাহ ধরে করোনা রোগীর চাপ অনেক বেশি। গতকাল ৪১ জন রোগী করোনা পজিটিভ নিয়ে ভর্তি হতে এসেছে। এর আগের দিন এসেছে ৭০ জন। আজ দুপুর ১টা পর্যন্ত ২৪ জন রোগী এসেছে। এছাড়া করোনা আক্রান্ত সন্দেহে শত শত রোগী আসছে। অনেকে করোনা পরীক্ষা করে বাসায় ফিরে যাচ্ছেন।
রাজধানীর রায়েরবাগ থেকে সাহেদুল ইসলাম তার ভাইয়ের দুই ছেলে শাহরিয়ার আহমেদ ও আনাফ আহমেদকে নিয়ে করোনা ইউনিটে জরুরি বিভাগে বসে আছেন। তাদের বাবা আজাদ হোসেন দুইদিন আগে করোনা আক্রান্ত হয়ে মারা যান। করোনা আক্রান্ত হয়ে বাবা মারা যাওয়ায় তাদেরকে করোনা পরীক্ষা করানো হয়েছে আজ। নমুনা দিয়ে ফলাফলের জন্য অপেক্ষা করছেন তারা। সাহেদুল বলেন, ‘দুইদিন আগে হঠাৎ করে জ্বর, ঠাণ্ডা, কাশি নিয়ে ভর্তি হয়েছিলেন আমার ভাই। ভর্তি হওয়ার একদিন পরেই শ্বাসকষ্ট নিয়ে মারা যান। যেহেতু আমার ভাই করোনা আক্রান্ত হয়ে মারা যান তাই পরিবারের অন্য সদস্যরা করোনা আক্রান্ত হতে পারে। তাই পরীক্ষা করাতে নিয়ে আসলাম।
একইভাবে নমুনা দিয়ে ফলাফলের জন্য অপেক্ষা করছেন তানিয়া আক্তার। তিনি বলেন, দুইদিন জ্বর-ঠাণ্ডা-কাশি ছিল। তাই করোনা পরীক্ষা করাতে এসেছি। তার মতো আরও অনেকে করোনা পরীক্ষা করাতে এসেছেন।
কোভিড রোগীদের বর্তমান চিকিৎসা ব্যবস্থা নিয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ডা. জুলফিকার আহমেদ আমিন বলেন, ‘আগের চেয়ে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। কারো আইসিইউতে নেওয়ার প্রয়োজন হলেও আমরা বেডের সংকুলান করতে পারছি না। আমরা কেবিন ব্লকে ১০টি বেড বাড়িয়েছি। এক্সটেনশন করোনা ইউনিট নামে ৫০ শয্যার একটি ইউনিট বাড়ানো হয়েছে। এছাড়া শিগগিরই আরও ১০টি নতুন আইসিইউ বেড বাড়ানো হচ্ছে। সরকারের দির্দেশনা অনুযায়ী আরও সুযোগ সুবিধা বাড়ানোর পরিকল্পনা চলছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘করোনার জন্য অনেকের অক্সিজেন লাগে। আমাদের অতিরিক্ত বেড করার সুযোগ নেই। বেড ছাড়া রোগী ভর্তি করারও সুযোগ নেই। বর্তমানে ২১৫-এর মতো কোভিড রোগী সাধারণ বেডে চিকিৎসা নিচ্ছে। আর অতি সিরিয়াস ২০ জন আইসিইউতে রয়েছে। কোভিড রোগীদের চিকিৎসা অন্য সাধারণ রোগীর চিকিৎসা মতো নয়। প্রতিটি বেডের অক্সিজেন রাখতে হচ্ছে।’
সাধারণ রোগীদের কীভাবে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘সরকারি নির্দেশনা মেনেই আমরা চিকিৎসা দিচ্ছি। করোনা রোগী ছাড়া অন্য রোগীদের জন্য মোট ২ হাজার বেড রয়েছে আমাদের এখানে। তবে সেখান থেকে এখন ১ হাজার ২০০ বেডে রোগীদের চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। কারণ করোনা ছাড়াও যারা ভর্তি হচ্ছেন তারাও ওখানে এসে ৩ থেকে ৪ দিন পরে করোনা আক্রান্ত হচ্ছেন। এ মুহূর্তে সাধারণ রোগীর এর চেয়ে বেশি রাখার অবকাশ নেই।’
করোনা রোগীদের উদ্দেশ্য বিএসএমএমইউ পরিচালক বলেন, ‘করোনা সংক্রমণ হলেই যে হাসপাতালে আসতে এমন নয়। করোনা রোগীদের অনেক রকম লক্ষণ দেখা যায়। কারও কারও হালকা জ্বর, আবার কারও জ্বরের সঙ্গে কাশি। কারো পাতলা পায়খানা। তবে যাদের শ্বাসকষ্ট আছে এবং যাদের অক্সিজেন লেভেল ৯৩ নিচে নেমে গেছে তাদের অবশ্যই হাসপাতালে এসে চিকিৎসা নেওয়া উচিত।
ইত্তেফাক